নয়াদিল্লি, ৬ আগস্ট ২০২৫:
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের সতর্ক করে কঠোর বার্তা দিয়েছে ভারতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। একইসঙ্গে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি অব্যাহত রাখায় ভারতের ওপর শুল্ক আরও বাড়ানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এসব ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক।
🛂 মার্কিন ভিসাধারী ভারতীয়দের সতর্ক করলো দূতাবাস
সোমবার (৪ আগস্ট), সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম X (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নয়াদিল্লি দূতাবাস লিখেছে:
“আপনার মার্কিন ভিসার শর্তাবলি এবং অনুমোদিত থাকার সময়সীমা মেনে চলুন।
নিয়ম লঙ্ঘন করলে ভিসা বাতিল, নির্বাসন এবং ভবিষ্যতের ভিসার অযোগ্যতার মতো গুরুতর পরিণতি হতে পারে।”
পোস্টে আরও বলা হয়, I-94 অ্যাডমিট অব ডেট অতিক্রম করার পরও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলে তা আপনার শিক্ষাগত, কর্মসংস্থান বা ভ্রমণের সুযোগ স্থায়ীভাবে ব্যাহত করতে পারে।
এই ঘোষণাকে অনেকেই আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের আগমুহূর্তে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি হিসেবে দেখছেন, যেখানে ভারতীয় ভিসাধারীদের লক্ষ্য করা হচ্ছে।
🛢️ ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি নিয়ে ট্রাম্পের ক্ষোভ
একই দিন, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং ২০২৫ সালের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক সংবাদমাধ্যমে বলেন:
“ভারত রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ তেল কিনছে এবং সেগুলো বেশি দামে বাজারে বিক্রি করছে। তারা রুশ আগ্রাসনকে থামাতে কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। তাই আমরা ভারতের পণ্যে শুল্ক আরও বাড়াবো।”
ট্রাম্প বলেন, ভারতের এই আচরণ অগ্রহণযোগ্য, কারণ রুশ যুদ্ধযন্ত্রের হাতে ইউক্রেনে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছে, কিন্তু ভারত তা উপেক্ষা করে কেবল ব্যবসায়িক লাভ দেখছে।
তিনি আরও জানান, ২৫ শতাংশ শুল্ক ইতোমধ্যে আরোপ করা হয়েছে এবং আগামী ৭ আগস্ট থেকে তা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে পারে।
🇮🇳 ভারতের তীব্র প্রতিক্রিয়া: শুল্ক হুমকি অযৌক্তিক
এই হুমকির জবাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ট্রাম্পের বক্তব্য “অযৌক্তিক ও অহেতুক”।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেন:
“যুদ্ধের শুরুর দিকেই যুক্তরাষ্ট্র নিজেই আমাদের রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনতে উৎসাহ দিয়েছিল, যাতে বিশ্ববাজার স্থিতিশীল থাকে। আমাদের পুরোনো তেল সরবরাহকারী দেশগুলো ইউরোপমুখী হয়ে যাওয়ায় রাশিয়া হয়ে উঠে একমাত্র বাস্তবসম্মত উৎস।”
তিনি আরও বলেন, ভারত নিজস্ব জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বিবেচনায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এতে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ অনভিপ্রেত।
🇷🇺 রাশিয়ার জবাব: ট্রাম্পের নীতি ‘নব্য উপনিবেশবাদী’
ট্রাম্পের শুল্ক হুমকির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে রাশিয়াও। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন:
“ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ওয়াশিংটন একটি নব্য উপনিবেশবাদী নীতি গ্রহণ করেছে, যার মাধ্যমে তারা গ্লোবাল সাউথ-এর দেশের উপর আধিপত্য বজায় রাখতে চায়। এই শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের স্বাভাবিক গতিপথ বদলাতে পারবে না।”
তিনি ট্রাম্পের শুল্কনীতিকে এক প্রকার জাতীয় সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ বলেও অভিহিত করেন।
🌐 বিশ্লেষকদের মত: ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে চ্যালেঞ্জ বাড়ছে
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই বার্তা এবং শুল্ক হুমকি ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন সংকটের সূচনা করতে পারে।
বিশেষ করে—
-
ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি
-
রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা
-
শুল্ক বাড়ানো
—এই তিনটি বিষয় ভারতীয় অভিবাসী, শিক্ষার্থী ও রপ্তানিকারকদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্লেষকরা আরও বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য তার নির্বাচনী প্রচারণার অংশ হলেও এর বাস্তব প্রয়োগ হলে তা ভারতীয় অর্থনীতি ও অভিবাসী সমাজে ধাক্কা দিতে পারে।
📌 মূল সূত্র:
-
NDTV Report on US Visa Warning (August 4, 2025)
-
CNBC Interview with Donald Trump (August 5, 2025)
-
Hindustan Times on India’s Response (August 5, 2025)
-
Anadolu Agency on Russian Reaction (August 6, 2025)