কুয়ালালামপুর, ১২ আগস্ট ২০২৫ — বাংলাদেশ আগামী ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য পূর্ণ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে সরকারি সফরে অবস্থানকালে তিনি এই ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টা বলেন— “বাংলাদেশে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, সেই অনুযায়ী সব প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।”
জাতীয় নির্বাচন ২০২৬: প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই ঘোষণা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন গতি আনবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জল্পনা চলছিল, আর এবার তিনি স্পষ্ট সময়সূচি জানিয়ে দিলেন।
-
নির্বাচন হবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি
-
অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত
-
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের আশ্বাস
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হবে।
বিনিয়োগবান্ধব বাংলাদেশ: মালয়েশিয়ান ব্যবসায়ীদের আহ্বান
যৌথ ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেন—
“বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে ব্যবসায়িক পরিবেশ স্থিতিশীল ও ব্যবসাবান্ধব। শিল্প খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত।”
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, শক্তিশালী শ্রমবাজার, এবং ক্রমবর্ধমান ভোক্তা চাহিদা বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করেছে। মালয়েশিয়ান ব্যবসায়ীদের পোশাকশিল্প, আইটি সেক্টর, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, এবং পর্যটন খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করেন তিনি।
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আসিয়ানের সহযোগিতা প্রত্যাশা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের মানবিক ও রাজনৈতিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন—
“এই সংকট সমাধানে আঞ্চলিক সংগঠন আসিয়ানের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা আশা করি, আসিয়ান টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।”
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শরণার্থী সংকট হিসেবে পরিচিত রোহিঙ্গা ইস্যু বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি
এর আগে স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় পুত্রাযায়ায় মালয়েশিয়ার প্রশাসনিক ভবনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহীম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার এবং অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে মোট পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (MoU) সই হয়। এর মধ্যে রয়েছে—
-
প্রতিরক্ষা সহযোগিতা
-
শ্রমবাজার সম্প্রসারণ
-
জ্বালানি খাতে অংশীদারিত্ব
-
বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়ন সহযোগিতা
-
রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যৌথ উদ্যোগ
এই চুক্তিগুলো উভয় দেশের সম্পর্ককে আরও গভীর করবে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি সফরের প্রথম দিন: কর্মসূচি ও পরিকল্পনা
প্রধান উপদেষ্টার এই তিন দিনের সরকারি সফরের প্রথম দিনেই বৈঠক ও চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সফরের বাকি দিনগুলোতে তিনি—
-
মালয়েশিয়ার শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন
-
প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন
-
দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সহযোগিতা পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন
বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া সম্পর্কের নতুন অধ্যায়
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। শ্রমবাজার, শিক্ষা বিনিময়, বাণিজ্য সম্প্রসারণ, এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতা— সব ক্ষেত্রে দুই দেশ পারস্পরিকভাবে উপকৃত হয়ে আসছে। এবার নতুন চুক্তি এবং বিনিয়োগ সুযোগ উন্মুক্ত হওয়ায় সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মালয়েশিয়ায় বর্তমানে প্রায় ১০ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মরত আছেন, যারা দুই দেশের অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছেন।
উপসংহার
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই ঘোষণা শুধু রাজনৈতিক দিক থেকেই নয়, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ। বিনিয়োগবান্ধব বার্তা, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আহ্বান, এবং মালয়েশিয়ার সঙ্গে নতুন চুক্তি— সব মিলিয়ে এই সফর বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে।