নয়াদিল্লি, ১২ আগস্ট ২০২৫ — যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ শতাংশ শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপের প্রভাব ইতোমধ্যেই ভারতের তৈরি পোশাক শিল্পে বড় ধাক্কা দিয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত এই শুল্কের কারণে বিশ্বের নামী ব্র্যান্ডগুলো ভারতের গার্মেন্টস অর্ডার স্থগিত করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার মতো প্রতিদ্বন্দ্বী বাজারে সরিয়ে নিচ্ছে।
ভারতের নিটওয়্যার রাজধানী তামিলনাড়ুর তিরুপ্পুর অঞ্চলের রপ্তানিকারকরা বলছেন, অনেক দীর্ঘদিনের ক্রেতা হঠাৎ করে অর্ডার বাতিল করছেন বা সস্তা বিকল্প দেশের দিকে ঝুঁকছেন। মার্কিন শুল্ক হার ভারতের ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৬৪ শতাংশে পৌঁছেছে, যেখানে বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা ভিয়েতনামের ক্ষেত্রে তা ১৯-৩৬ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্কে ভারত প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে
আগে ক্রেতারা ২৫ শতাংশ শুল্কভার ভাগাভাগি করার জন্য ভারতীয় রপ্তানিকারকদের চাপ দিতেন, কিন্তু এখন তা দ্বিগুণ হয়ে এক ধরনের বাণিজ্যিক অবরোধের রূপ নিয়েছে। এর ফলে ভারতীয় পোশাকের দাম আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি হয়ে যাচ্ছে।
তিরুপ্পুর, কোয়েম্বাটুর ও কারুর মতো শিল্পাঞ্চলে সাড়ে ১২ লাখেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন, আর বছরে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার পোশাক রপ্তানি হয়। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হ্রাস পেলে সরাসরি এই অঞ্চলের শ্রমবাজারে আঘাত আসবে।
বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের জন্য সুযোগ
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন বাজারে ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ এখন ২০ শতাংশ শুল্ক সুবিধা ভোগ করছে, যা ক্রেতাদের কাছে পণ্যকে অনেক সস্তা করছে। পাকিস্তানের শুল্ক নেমে এসেছে ১৯ শতাংশে, ভিয়েতনামের ২০-২১ শতাংশ, আর কম্বোডিয়া সম্প্রতি শুল্ক ৪৯ শতাংশ থেকে ১৯ শতাংশে নামিয়েছে।
এর ফলে বাংলাদেশি পোশাক শিল্প ও পাকিস্তানি গার্মেন্টস খাত নতুন মার্কিন অর্ডার পাচ্ছে, যা আগে ভারতের হাতে ছিল।
হোম টেক্সটাইলও সংকটে
মার্কিন শুল্ক শুধু পোশাকে নয়, হোম টেক্সটাইল খাতেও প্রভাব ফেলছে। বিছানার চাদর, তোয়ালে ও অন্যান্য গৃহস্থালি বস্ত্রের বড় ক্রেতারা তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটুর ও কারু অঞ্চলের অর্ডার স্থগিত করেছেন। বছরে কারু থেকে প্রায় ৯ হাজার কোটি রুপির হোম টেক্সটাইল রপ্তানি হয়, যার একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রমুখী।
সাউদার্ন ইন্ডিয়া মিলস অ্যাসোসিয়েশনের মতে, তুলার ওপর ১১ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং জিএসটি অসঙ্গতি ভারতীয় উৎপাদকদের আরও প্রতিযোগিতাহীন করে তুলেছে। পলিয়েস্টার কাঁচামালে ১৮ শতাংশ, সুতায় ১২ শতাংশ এবং পোশাকে ৫ শতাংশ শুল্কও উৎপাদন ব্যয় বাড়াচ্ছে।
চাকরি হারানোর ঝুঁকি
রপ্তানি ১০-২০ শতাংশ কমে গেলে আগামী কয়েক মাসে তিরুপ্পুর, কারু ও কোয়েম্বাটুরে ১-২ লাখ মানুষের চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। শিল্প মালিকরা আশঙ্কা করছেন, ব্র্যান্ডের বাইরের ক্রেতারা দ্রুত সরে যাবে, যা সরাসরি উৎপাদন ও কর্মসংস্থানে প্রভাব ফেলবে।
শিল্প মালিকদের দাবি
তিরুপ্পুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম সুব্রাহ্মনিয়ান বলেছেন—
“আমাদের মুনাফা মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ। এই পরিস্থিতিতে এত বেশি শুল্কভার বহন করা অসম্ভব।”
তিনি কাঁচামালের ওপর শুল্ক ৫ শতাংশের নিচে নামানো এবং তুলা আমদানির শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানান। তার মতে, এসব নীতি সংস্কার না হলে ভারত স্থায়ীভাবে মার্কিন বাজার হারিয়ে ফেলতে পারে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর হাতে বাজার চলে যাবে।
ভবিষ্যৎ চিত্র
বর্তমান শুল্ক কাঠামো অব্যাহত থাকলে ভারতীয় গার্মেন্টস রপ্তানি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রত্যাশিত ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধির পরিবর্তে ৪০-৫০ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন ক্রেতারা এখনও ভারতীয় মান পছন্দ করেন, কিন্তু রাজনৈতিক ও নীতি-সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা তাদের বিকল্প বাজার বেছে নিতে বাধ্য করছে।